অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ব্রিটেনের প্রায় ৩০টি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। যারা এসব নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে রোগীদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর কর্মীরা রয়েছেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মানসিক রোগে আক্রান্ত হাজার হাজার ব্রিটিশ নাগরিক প্রতি বছর দেশটির সরকারি জনস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ইরানের বার্তা সংস্থা মিজানের বরাত দিয়ে পার্সটুডে ফার্সি জানাচ্ছে, ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনা দেশটির জন্য একটি ‘জাতীয় কেলেঙ্কারিতে’ পরিণত হয়েছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ ও ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক স্বতন্ত্র তদন্তে দেশটির মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে যৌন কেলেঙ্কারির এ চিত্র উঠে এসেছে। ওই তদন্তে সাবেক ব্রিটিশ নারী সাতারু অ্যালেক্সিস কুইনের জবানবন্দি রয়েছে যেখানে তিনি তার ওপর চালানো যৌন নিপীড়নের বিবরণ তুলে ধরেছেন।
ব্রিটিশ জনস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশিত হওয়ার পর সাবেক এই ব্রিটিশ নারী সাতারু চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছেন।
স্কাই নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলে অ্যালেক্সিস কুইনের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এই নারী সাতারু নিজে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের বর্ণনা দেন। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যমে একজন ক্রীড়াবিদের প্রকাশ্য অভিযোগ সত্ত্বেও কোনো যৌন নিপীড়কের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বা কোনো মামলা করা হয়নি। তবে কুইনের সাহসিকতা থেকে মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে নিপীড়নের শিকার আরো বহু মানুষ সাহস করে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিতে এগিয়ে আসেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন আইন বিভাগে শিক্ষা সমাপনকারী এক নারী যিনি একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কীভাবে একজন কর্মীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন তার বর্ণনা দেন।
এছাড়া, দুই সন্তানের এক মা জানান, তিনি পাঁচ মাস ধরে একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এবং এ সময়ে ওই কেন্দ্রের এক কর্মী তার ওপর অসংখ্যবার ‘ভয়ঙ্কর’ যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে।
স্কাই নিউজকে অ্যালেক্সিস কুইন বলেছেন: আমি ভাবতাম হয়তো আমি একাই এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছি কিন্তু এখন দেখছি আমার মতো হাজার হাজার অসহায় মানুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ব্রিটিশ মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে ২০ হাজার যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ঘটেছে এসব কেন্দ্রে ভর্তি রোগীদের ওপর এবং এই সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েছে।
স্কাই নিউজ এ সংক্রান্ত তদন্ত করতে গিয়ে যৌন নিরাপত্তাকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছে। যখন কোনো নারী বা পুরুষ কোনো অবাঞ্ছিত যৌন আচরণে অস্বস্তিকর বা অনিরাপদ বোধ করেন তখন তাকে যৌন নিরাপত্তাহীনতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানি।
যৌন নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের সাবেক কমিশনের ডিয়েম ভেরা বিয়ার্ড প্রকাশিত পরিসংখ্যানকে ‘জাতীয় কেলেঙ্কারি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এদিকে ব্রিটিশ রয়্যাল কলেজ অফ সাইকিয়াট্রিস্টের সভাপতি লিড স্মিথ বলেছেন: এসব ‘ভয়ঙ্কর’ তথ্য আমাদেরকে একথা জানান দিচ্ছে যে, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর রোগী ও কর্মীদেরকে যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এখনও অনেক কিছু করতে হবে।
Leave a Reply